
- কালের সাক্ষী নীলচাষ ও নীলকুঠি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদারুণ নিদর্শন
- আমঝুপি নীলকুঠি
- ভাটপাড়া নীলকুঠি/ ভাটপাড়া ডিসি পার্ক
বিশেষ প্রতিবেদন; মোঃ আসাদুজ্জামান খান: নীলচাষ ও নীলকুঠি শুনলেই আজও চোখের সামনে ভেসে উঠে কোন ইংরেজ লাটের হাতে চাবুক, অসহায় কৃষকের চোখের জল, আহাজারি ও ক্ষুধার হিংস্র থাবা। আমরা ফিরে যাই ১৭৭৭ সালে যখন ভারতবর্ষে প্রথম নীল চাষ শুরু করে ইংরেজ বণিকরা আর অনিচ্ছা থাকা সত্বেও নীল চাষে বাধ্য হওয়া অসহায় কৃষক। এই নীল চাষ শুরু হলে ইংরেজরা বিভিন্ন স্থানে কুঠি স্থাপন করে নীল চাষ পরিচালনার জন্য। ব্রিটিশ শাসনামলের এই কুঠিগুলো নীলকুঠি নামে পরিচিত আর আজও কালের বিবর্তনে বিভিন্ন স্থানে এসব নীলকুঠি দাঁড়িয়ে আছে নির্মমতার নিদর্শন হয়ে। নীল চাষ নিয়ে বিভিন্ন সাহিত্যে যেমন বর্ণনা রয়েছে, তেমনি কলঙ্কিত আগ্রাসন ও ক্লেশময় সামাজিক সংগ্রামের চিহ্ন হয়ে আছে মেহেরপুরে নীলচাষের ইতিহাস।

নীলকুঠি নীলচাষ
মেহেরপুরে বিভিন্ন এলাকায় নীলচাষের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি নীলকুঠি স্থাপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে সব বিলুপ্ত হয়ে ভিটেমাটি নিশ্চিহ্ন হয়ে আছে। কাজলা নদীর তীরে আমঝুপি ও গাংনীর ভাটপাড়ায় সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীলকুঠি। নীল চাষ ও নীলকরদের দীর্ঘ ইতিহাস মেহেরপুরের বুকে জড়িয়ে আছে। ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত জন ফিলিপস্- এর নীলচাষ বিষয়ে রচিত গ্রন্থে বলা হয়েছে, যে মশিয়ে লুই বান্নো বা বোনার্দ নামক জনৈক ফরাসী ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রথম নীল চাষ শুরু করেছিলেন। আমঝুপি নীলকুঠি ১৮১৫ সাল অথবা এরোও কিছুকাল পরে স্থাপিত হয়েছে।
আমঝুপি নীলকুঠি: মেহেরপুর জেলা সদর থেকে ৭ কি.মি. দূরে অবস্থিত আমঝুপি নীলকুঠি যা ইংরেজদের শাসনামল এর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ইতিহাসবিদদের মতে ১৮০০ সালের দিকে প্রায় ৭৭একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আমঝুপি নীলকুঠি, যার প্রবেশপথ দুইটি, মাঝে মূল ভবন ঘিরে রয়েছে ফুলের বাগান। কুঠির পাশেই রয়েছে কাজলা নদী। ১৯৭২ সালে প্রথম এই আমঝুপি নীলকুঠি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সরকার।

ভাটপাড়া নীলকুঠি
ভাটপাড়া নীলকুঠি: মেহেরপুর জেলা সদর থেকে ১৭কি.মি. দূরে ভাটপাড়া নীলকুঠি অবস্থিত যা ২০১৭সাল থেকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করা হয়। প্রায় ২৭একর জমিতে অবস্থিত কুঠিবাড়িটির মূল ভবনটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। এছাড়াও ভগ্নদশায় আছে নীলকুঠির জেলখানা, মৃত্যুকূপ ও ঘোড়ারঘর। তবে পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে গড়ে তুলতে কৃত্রিম লেক, ঝর্ণা, ফুলের বাগান, পার্ক স্থাপন করা হয়েছে।